মাঙ্গা

মাঙ্গা কি? জাপানিজ মাঙ্গা সৃষ্টির ইতিহাস

বর্তমানে বাংলাদেশে এনিমে এবং মাঙ্গা এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। মাঙ্গা এর অসাধারণ গল্প এবং আর্ট মানুষকে মুগ্ধ করে তুলে। যার কারণে মাঙ্গা পড়ার মানুষের সংখ্যাও বেড়েই চলছে। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই মাঙ্গা পড়লেও মাঙ্গা বলতে কি বুঝায় এবং মাঙ্গা এর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল তা জানি না। আজকের এই পোস্ট আপনাদের সাথে মাঙ্গা কি এবং প্রথম থেকে এটি কিভাবে সৃষ্টি হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। তার আগে যুক্ত হোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাঙ্গা গ্রুপে..!

মাঙ্গা কি?

মাঙ্গা

মাঙ্গা একটি শব্দ যা জাপানি কমিক বই এবং গ্রাফিক উপন্যাসের একটি বৈচিত্র্যময় এবং বিস্তৃত অংশকে বোঝায়। মাঙ্গা এরকম ভাবে তৈরী করা হয় যেন এগুলিকে সমস্ত বয়স এর মানুষ পড়তে পারে৷ পশ্চিমা কমিক্সের বিপরীতে, যেখানে প্রায়শই পূর্ণ-রঙের শিল্পকর্ম দেখানো হয়, মাঙ্গা ঐতিহ্যগতভাবে সাদা কালো। এটি শুধুমাত্র উৎপাদন খরচ কমায় না বরং আবেগ এবং গল্প বলার ক্ষেত্রে লাইন আর্ট এবং ছায়ার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। জাপানি এবং বিশ্বব্যাপী পপ সংস্কৃতিতে মাঙ্গার একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।

অনেক জনপ্রিয় অ্যানিমে সিরিজ মাঙ্গার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং মাঙ্গা সিনেমা, ভিডিও গেম এবং মিডিয়ার অন্যান্য বিভিন্ন রূপকে অনুপ্রাণিত করেছে। মাঙ্গা জাপানে উদ্ভূত হলেও, এটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ভাষায় মাঙ্গার অনুবাদ থাকার কারণে এটিকে বিশ্বজুড়ে পাঠকদের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলেছে।সামগ্রিকভাবে, মাঙ্গা একটি বহুমুখী এবং প্রভাবশালী মাধ্যম যা পাঠকদের বিস্তৃত গল্প বলার অভিজ্ঞতা, শৈল্পিক অভিব্যক্তি এবং সাংস্কৃতিক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এটি জাপানে এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্য এবং ভিজ্যুয়াল সংস্কৃতি এর উভয় জায়গায়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে চলেছে।

মাঙ্গা কিভাবে তৈরি শুরু হয়?

অনেক পুরানো সংস্কৃতিতে, গল্প বলার জন্য কিছু লিখার বিবরণ সহ ছবির উদাহরণ রয়েছে। যদি আমরা উদাহরণ দিতে চাই তাহলে – পশ্চিমাদের প্রাচীনতম উদাহরণ হতে পারে ট্যাপেস্ট্রি। যাইহোক, যা জাপানকে অন্যান্য থেকে অনন্য করে তুলেছে তা হল, সাধারণ মানুষের উচ্চ সাহিত্যের হার এবং এর কাঠে মুদ্রণ করা চিত্র বা বই। নিচে কুসাজোশি নামক বিনোদনের ছবির বইয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো যেগুলো এডো আমলে (Edo Period) ছাপা হয়েছিল।

মাঙ্গা কি? মাঙ্গা সৃষ্টির ইতিহাস
কাঠে মুদ্রণ করা কুসাজোশি

কিন্তু, জাপানে “কমিক” এর উৎপত্তি আসলে পশ্চিমাদের থেকেই। বিশেষ করে জাপানে বসবাসকারী ইংরেজ কার্টুনিস্ট দ্বারা প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন যার নাম ছিল – “জাপান পাঞ্চ, যা আবার লন্ডনে থাকা “পাঞ্চ” দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। জাপান পাঞ্চ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ইয়োকোহামা তে 1862 সালে এবং জাপানে বসবাসকারী পশ্চিমাদের মধ্যে এটি খুব জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এই কমিক্স গুলো শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছিল।

The Japan Punch
জাপান পাঞ্চ

মাঙ্গার সবচেয়ে কাছের ধারার পূর্বপুরুষ হলো নিচের ছবিতে দেওয়া কামি-শিবাই যার অর্থ “কাগজের থিয়েটার” যা বাংলাদেশের বায়োস্কোপ এর মত কিছুটা। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে শিশুদের জন্য একটি রাস্তার বিনোদন ছিল।  বুঝতে হবে যে, সেই সময়ে বাচ্চাদের কাছে বই বা ম্যাগাজিন বা কমিক কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তবে অনেক শহুরে বাচ্চাদের মিষ্টি কেনার জন্য কিছু মুদ্রা তাদের বাবা – মা তাদের দিত। সুতরাং, রাস্তার মিষ্টি বিক্রেতারা তাদের কাছে মিষ্টি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত এবং তারপরে কিছুক্ষণের জন্য শিশুদের বিনোদন দিত এইসব কাগজের থিয়েটারে। কিছুক্ষণ থাকার পর তারা তারপরে পাশের পাড়ায় চলে যেত। শীঘ্রই, তারা দেখতে পেল যে, যদি তারা কাগজের থিয়েটার এ একটি ধারাবাহিক গল্প বলে তবে তারা এই শিশুদের আবারও গ্রাহক হিসাবে তৈরি করতে পারে। কারণ তখন শিশুদের মনে এর পরে কি হয়েছিল এই নিয়ে একটি কৌতুহল থাকবে।

কামি শিবাই বা কাগজের থিয়েটার
কামি শিবাই বা কাগজের থিয়েটার

কিন্তু, এটি শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বাচ্চারা পুরানো ক্লাসিক গল্পগুলি বেশি উপভোগ করে না। বরং, তারা আসলে আধুনিক সেটিং এর গল্প যেমন শিশু গোয়েন্দা, রহস্যময় দানব এবং অবশেষে ১৯৩০-এর দশকে সুপারহিরো এর গল্পগুলো বেশি পছন্দ করে। যেমন: নিচের Ogon Bat ১৯৩১ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এটা সম্ভবত বিশ্বের প্রথম সুপারহিরো বা অ্যান্টি-হিরো এর গল্প কারণ, এই গল্পটি মূল হল: একজন আটলান্টিয়ান ডেমি-মানুষ এর। যার সুপার শক্তি এবং উড়ার ক্ষমতা নিয়ে ভ্রমণ করার সময় তিনি ডাঃ এরিক নাজোর সাথে লড়াই করেন যে একটি ক্রাইম সিন্ডিকেট এর লিডার এবং বিশ্ব আধিপত্যের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

Ogon Bat
Ogon Bat

এছাড়াও ১৯৩০-এর দশকের দিকে, শিশুদের জন্য মাঙ্গা প্রকাশনা বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হতে শুরু করে। এই ম্যাগাজিনগুলোকে আকা-হন (লাল বই) বলা হত কারণ এদের সামনের বইয়ের কভার ছিল লাল। এই সময়তেই এই পনচি ছবিগুলো ওরফে কমিককে মান-গা বলা শুরু হয়, যার অর্থ হলো প্রবাহিত ছবি কারণ এই ম্যাগাজিন গুলো ধারাবাহিক ছবির মাধ্যমে গল্প বলা শুরু করে।

আকা হন বা লাল বই
আকা হন বা লাল বই

তারপর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে, ১৯৪৭ সালে, তেজুকা ওসামু এবং সাকাই শিচিমা মিলে শিন-টাকারাজিমা (নতুন ট্রেজারি আইল্যান্ড) নামে একটি কমিক বুক প্রকাশ করেন। যদিও বেশিরভাগ রেড-বুক কমিক শিশুদের ম্যাগাজিনের অংশ হিসাবে শুধুমাত্র ৪ পৃষ্ঠার মতো ছিল। কিন্তু শিন-টাকারাজিমা ২০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এবং ম্যাগাজিনের একটি অংশের পরিবর্তে একটি স্বাধীন বই হিসাবে বিক্রি করা শুরু হয়। শিন তাকারাজিমা-তে, তারা জেনার-ব্রেকিং নতুন কৌশল ব্যবহার করে, যেখানে গল্পটিতে কোনো লিখা ছিল না শুধু ছবির ক্রম দ্বারা গল্প চালিত হয়েছিল। নীচে মাঙ্গা এর একটি পেজের ছবি দেওয়া হলো যেখানে গল্প বর্ণনা করার জন্য কোন টেক্সট ব্যবহার করা হয় নি – 

শিন-টাকারাজিমা এর একটি প্যানেল যেখানে কোনো টেক্সট নেই
শিন-টাকারাজিমা এর একটি প্যানেল যেখানে কোনো টেক্সট নেই

এই শিন টাকারাজিমায় কে কী করেছে তা নিয়ে একটি অমীমাংসিত বিতর্ক রয়েছে। সাকাইকে কৃতিত্ব দেওয়া হয় যে তিনি গল্পটি লিখেছেন এবং সামগ্রিক সম্পাদনা করেছেন।অন্যদিকে, তেজুকাকে চিত্রকর হিসাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হল, তখন তেজুকা একজন আপস্টার্ট কমিক লেখক ছিলেন এবং সাকাই কেবল কমিকের একজন অভিজ্ঞ সম্পাদকই ছিলেন না তিনি আসলে একজন অ্যানিমেটরও ছিলেন।

ব্যাবসা সফল শিন টাকারাজিমা
ব্যাবসা সফল শিন টাকারাজিমা

যাইহোক, সাকাই লাল বইয়ের একজন কমিক লেখক হিসাবে ওসাকায় থেকে যায় আর অন্যদিকে তেজুকা, শিন তাকারাজিমার সাফল্যের পরে, ওসাকা থেকে টোকিওতে চলে যায় এবং তার মাঙা লিখার কৌশল বিকাশ করতে শুরু করে এবং একটি নতুন ধারা তৈরি করে যা স্টোরি মাঙ্গা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর পর, জাপানে স্টোরি মাঙ্গা প্রভাবশালী এবং অনেক জনপ্রিয় রূপ হয়ে ওঠে এবং স্টোরি মাঙ্গাকে কেবল মাঙ্গা বলা শুরু হয়।

এভাবেই মাঙ্গা এর উৎপত্তি শুরু হয়।

লিখা – রিদুয়ান চৌধুরী নোমান / Peak Fiction

Share This Post -

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *